শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হয়—ব্যবসায়ীদের এমন অভিযোগের প্রেক্ষাপটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আপনারা ঘুষ দিচ্ছেন কেন? আপনাদের কাছে অনুরোধ, ঘুষ দেবেন না।’ এ সময় হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘ঘুষ দেওয়া যাবে না। যারা ঘুষ দেয়, তাদের জায়গা হবে জাহান্নামে।’
এভাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন। আজ মঙ্গলবার আসন্ন বাজেট উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত পরামর্শক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় অনেক ব্যবসায়ী শুল্ক-কর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ করেন।
রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কর দিতে হবে। কর না দিলে পদ্মা সেতু কীভাবে হবে? মেগা প্রকল্প শেষ হবে কীভাবে?’ তিনি আরও বলেন, আগামী বাজেট হবে সবার জন্য লাভজনক। ব্যবসায়ীরা ঠকবেন না, তাঁরা ঠকলে দেশ পিছিয়ে যাবে।
ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ‘আমার খুব কষ্ট হয়, যখন অল্পকিছু বিপথগামী শুল্ক-কর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীর জন্য রাজস্ব বিভাগের বদনাম হয়। আমরা উভয়ের মধ্যে বিশ্বাস ও বন্ধুত্ব চাই। সমালোচনা নয়, সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন করদাতাদের হয়রানি না করার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, নিরীক্ষা ও পরিদর্শন–সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বিধি মোতাবেক পরিচালনা করা উচিত। এতে হয়রানিমুক্ত থাকবেন ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া কয়েকজন ব্যবসায়ী আলোচনায় অংশ নিয়ে কর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তোলেন। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, অতিক্ষুদ্র দোকানেরও ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হয়। নিবন্ধন নিয়ে রিটার্ন না দিলে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। এ ধরনের হয়রানি বন্ধ করা উচিত।
কিশোরগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, ‘পকেট রাজস্ব’ বন্ধ করতে হবে। ব্যবসায়ীরা যেন হয়রানির শিকার না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব বন্ধ করলেই শুল্ক-করের লক্ষ্য পূরণ হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন খাতে ব্যবসায়ীরা নিজেদের দাবিদাওয়া সভায় তুলে ধরেন।
সভায় এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ করা হয়। যেমন করমুক্ত আয়সীমা চার লাখ টাকায় উন্নীত করা, করপোরেট কর হার আরও আড়াই শতাংশ কমানো, রপ্তানি খাতসহ সব শিল্প খাতে উৎসে কর ও আগাম কর ফেরত দেওয়ার পরিবর্তে বিলোপ করা। এ ছাড়া শুল্ক হার পুনর্বিন্যাস করে তৈরি পণ্যে ২৫ শতাংশ, দেশে উৎপাদিত যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও মধ্যবর্তী কাঁচামালে ৭ থেকে ১০ শতাংশ, মৌলিক ও দেশে উৎপাদিত হয় না, এমন মধ্যবর্তী কাঁচামালে ১ থেকে ৩ শতাংশ ও শিল্প খাতের যন্ত্রপাতি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।